হাবিবুল বারি হাবিব : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ-মনাকষা সড়কের পাগলা নদীর ওপর ৩৫ বছরের ঝুঁকিপূর্ণ বেইলি ব্রিজটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে । শনিবার ১৪ অক্টোবর ২০২৩ বিকেলে ১৭২ মিটার দীর্ঘ ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল । বর্তমান সংসদ সদস্যের বাবা প্রয়াত সংসদ সদস্য ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মইন উদ্দিন আহম্মেদ মন্টু’ সেতু নামে ব্রিজটির উদ্বোধন করা হয়। এ সময় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আব্দুল মান্নান, এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রামাণিক শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াতসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে গত বছরের মার্চে শিবগঞ্জে তিনটি সেতু নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ কমিটি- একনেক। সেতু তিনটির মধ্যে একটি ছিল উপজেলার শিবগঞ্জ জিসি-খাসের হাট জিসি ভায়া মনাকষা হাট রাস্তায় ১৫২৫ মিটার পাগলা নদীর ওপর বহুল প্রত্যাশিত এ সেতু।শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর এলাকার বাসিন্দা শাহিন আলী জানান, ব্রিজটির স্টিলের পাটাতনগুলো নিদিষ্ট স্থান থেকে সরে গেছে এবং কয়েকটি পাটাতন দেবে গেছে। এক বছর ধরে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ভারী যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। গত এক বছরে দুই দফায় নদীতে পাটাতন পড়ে গিয়ে কয়েকজন আহতও হয়েছে। সেতু দিয়ে মনাকষা, বিনোদপুর, শ্যামপুর, পাকা ও দুর্লভপুরসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ যাতায়াত করে। সেতুটিতে যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় এখানে আটকে থাকতে হত। নতুন সেতুটি চালু হলে এ দুর্ভোগ থেকে তারা রক্ষা পাবেন। উজিরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার একমাত্র সরকারি কলেজ আদিনা ফজলুল হক সরকারি কলেজসহ ৭০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৮টি কলেজ ও ২০টি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করতেন এই ব্রিজ দিয়ে। যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো তাদের। সেতুটি চালু হলে এ দুর্ভোগের লাঘব হবে। পাঁকা ইউনিয়নের একজন কৃষক লাল মোহাম্মদ সেতু উদ্বোধনের খবর জেনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, হাঁরা (আমরা) তো ফসল এক বছর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূর বিনোদপুর ঘুর্যা শিবগঞ্জ বেচতে যাতুন (বিক্রি করতে)। এতে পরিবহন খরচ বাড়ত। সেতু হলে হাঁরঘে মেলা(আমাদের অনেক) উপকার হবে। এ বিষয়ে এলজিইডির জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী মোজাহার আলী প্রামাণিক জানান, কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে গেছেন। ইতোমধ্যেই টেন্ডার ডেকে ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শনিবার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের পর নভেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং ৩ বছরের মাথায় আগামী ২০২৭ সালের জুলাই মাসে এর নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে । চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ১৯৮৬ সালে আমার বাবা তৎকালীন সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত ডা. মইন উদ্দিন আহম্মেদের (মন্টু ডাক্তার) উদ্যোগে পাগলা নদীর ওপর বেইলি ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ১৯৮৮ সালে শেষ হয়। ১৫০ মিটার দীর্ঘ ও ১২ ফুট প্রস্থ বেইলি ব্রিজটি দীর্ঘ ৩৫ বছরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয় যায়।
মানুষের চাপ বাড়ায় এবং সংস্কারের অভাবে বেইলি ব্রিজটি দিয়ে চলাচল করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। পাগলা নদীর পূর্বপাড়ের প্রায় তিন লাখ মানুষের কথা চিন্তা করে সেখানে একটি নতুন ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নির্মাণে ৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। এ ব্রিজটি পুনঃনির্মাণ হলে এ অঞ্চলের আর্থসামাজিক, কৃষি, শিক্ষা স্বাস্থ্যখাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে ।